রফিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঘটেছে চরম অবমাননাকর ও উদ্বেগজনক এক ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নার্স ইনচার্জ রোগীর অভিভাবকের দিকে তেড়ে আসছেন, এমনকি মারধরের জন্য হাত তুলছেন। ভিডিওটি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে হাসপাতালের নৈতিকতা ও সেবাদানের মান নিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি সাধারণ প্রশ্ন বা অনুরোধ ঘিরে। রোগীর অভিভাবক শিশু রোগীর সেবা নিয়ে নার্সদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু, তার জবাবে নার্স ইনচার্জ উত্তেজিত হয়ে যান এবং রোগীর অভিভাবককে শারীরিকভাবে আক্রমণের জন্য তেড়ে আসেন।
এই ধরনের আচরণ একটি সরকারি হাসপাতালের পেশাদারিত্ব ও সেবার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নার্সদের প্রধান দায়িত্ব রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সহনশীল আচরণ করা। একজন ইনচার্জ হিসেবে তার কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল ও ধৈর্যশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া: ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, হাসপাতাল তো মানুষের সেবার জায়গা, এখানে যদি রোগীর স্বজনরাও নিরাপদ না থাকেন, তাহলে তারা কোথায় যাবেন? অনেকেই নার্স ইনচার্জকে দ্রুত বহিষ্কার করার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে স্বাস্থ্যখাতে অনৈতিক আচরণ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া বন্ধ করা কঠিন। এই ঘটনায় নার্স ইনচার্জের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে আরও কেউ এমন আচরণ করার সাহস পাবে। এটি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান মনোভাব ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির প্রতিফলন।
প্রশাসনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নার্স ইনচার্জকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ প্রতিরোধে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও নজরদারি নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে জনগণের আস্থা আবারও ফিরিয়ে আনা যায়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নার্স ইনচার্জের এই আচরণ পুরো স্বাস্থ্যখাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালগুলোকে নিরাপদ মনে করবে না। তাই, দোষী নার্সের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হাসপাতাল পরিচালনার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা: হোসেন ইমামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালক ডা: নাসির উদ্দীন জানান, এই ভিডিও যদি আমাদের হাসপাতালের হয়ে থাকে, তবে অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।